বাংলাদেশে ইসলামি ইতিহাস পাঠে মানুষের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। ইসলামি ইতিহাস বিষয়ক বইও বের হচ্ছে অনেক। মানুষের আগ্রহ মূলত গল্পে, রোমাঞ্চকর কাহিনীতে। সাধারণ মানুষ ঐতিহাসিক সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, সবসময় ভালো-খারাপ ব্যাখ্যাতেও পার্থক্য করতে পারে না। এই সুযোগে ইতিহাসের অনেক রকমের বই বের হচ্ছে, যার অধিকাংশকেই মানোত্তীর্ণ বলা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চার জটিলতা
বাংলাদেশে ইতিহাসের বই আকারে বিক্রি হচ্ছে অনেক ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসের উপকারিতা অস্বীকার করা যায় না। উপন্যাস বিশেষ ভাবালোক ও কল্পনা তৈরি করতে পারে। কাহিনী নির্মাণে ঐতিহাসিক উপন্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে ঐতিহাসিক উপন্যাসের সবকিছু ঐতিহাসিক সত্য নয়, তাতে মিশ্রিত থাকে অনেক কল্পনা, আনুমানিক বিবরণ।
পাশাপাশি আরও দুটি কারণে জটিলতা বেড়েছে। এর একটি হচ্ছে, প্রাচ্যবাদী ব্যাখ্যার প্রসার। পশ্চিমা চোখে ইসলামি ইতিহাসের বয়ান। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি ইতিহাস নামে বিশেষ বিভাগ আছে দীর্ঘদিন ধরেই, তবে সেখানে প্রধানত পশ্চিমা সংকলন ও ব্যাখ্যাকেই সূত্রগ্রন্থ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। শিক্ষক ও ছাত্ররা সাধারণত উর্দু-ফার্সি-আরবি পারেন না।
প্রসিদ্ধ প্রকাশনা সংস্থাগুলোতেও এই প্রবণতা দেখা যাবে। ইসলামি ইতিহাস সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ বই ইংরেজি থেকে অনূদিত, পশ্চিমা লেখকদের গবেষণা-ব্যাখ্যা থেকে সংকলিত। দেশের মূলধারার প্রকাশনী-পাঠাগারগুলোতে খোঁজ নিলে এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। যদিও ইসলামি প্রকাশনীগুলো এই ধারায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। তবে বইমেলাসহ মূলধারায় তাদের প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ। ফলে সীমাবদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে।
এই বই নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশে ইতিহাস পাঠের পাশাপাশি ইতিহাস চর্চাতেও আগ্রহ বেড়েছে। তরুণদের মধ্যে যারা ইতিহাস বিষয়ক গবেষণা, সংকলন ও তৎপরতায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ইমরান রাইহান অন্যতম। শুধু তিনি একা নন, বন্ধু-বান্ধব-সহযোগী অনেকের মধ্যেই তিনি ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
এই বইটিকে বলা যায় নোটবুকের মতো। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই এসেছে। লেখক প্রথমদিকে ইতিহাসের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরবর্তীতে প্রচলিত কিছু সূত্রগ্রন্থের মান ও অবস্থান নিয়ে পর্যালোচনা পেশ করেছেন। শেষের দিকে কিছু প্রাসঙ্গিক নির্দেশিকা তুলে ধরেছেন।
এই বইটি যদিও কোন গবেষণা গ্রন্থ নয়। আধুনিক গবেষণায় নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। এই বইটিকে বলা যায় লেখকের দীর্ঘদিনের চর্চার সারনির্যাস। তিনি কীভাবে ইতিহাস পাঠ করেন, কীভাবে নির্বাচন করেন নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ও মতামত, সে বিষয়ে এই বইয়ে বিশদ বয়ান পাওয়া যাবে। ইমরান রাইহান ইতিহাস বিষয়ক বেশকিছু বই লেখেছেন, আরও লেখবেন। এই বইটি ধরা যায় তার ইতিহাস চর্চার জবানবন্দী, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-অবস্থান। এভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এই সংকলনের গুরুত্ব কোন অংশেই একাডেমিক গবেষণা থেকে কম নয়।
Reviews
There are no reviews yet.